
“জুইর” শব্দটির মূল উৎপত্তি নিয়ে স্পষ্ট কোনো লিখিত দলিল নেই। “জুইর” শব্দটি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার একটি ঐতিহ্যবাহী শব্দ, যার উৎপত্তি স্থানীয় জীবনযাত্রা এবং প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহারের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
অনেকে এটিকে ‘ঝঁঈর’, তুনী, ডোঙর ও জোমরা ইত্যাদি নামে ডেকে থাকে। স্থানীয় ভাষার ভিত্তিতে একেক এলাকায় এটি একেক নামে পরিচিত।
“জুইর” হলো বাঁশ ও তালের পাতা দিয়ে তৈরি বৃষ্টির সময় ব্যবহৃত এক প্রকার ছাতা। এ ছাতা শত শত বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি মূলত পাহাড়ি ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্রযুক্তি, যা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে বৃষ্টি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়। বাঁশ ও তালপাতা দিয়ে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এমন জিনিস ব্যবহার করার প্রচলন সম্ভবত তখন থেকেই শুরু, যখন মানুষ প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তু তৈরি করতে শিখেছিল। চট্টগ্রামসহ পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে বৃষ্টি প্রতিরোধে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য এই ধরনের বস্তুর প্রচলন করে আসছে।
তৈরি করার উপকরণ :
১. কাঁচা বাঁশ কিংবা পরিপক্ব বাঁশ
২. তালপাতা কিংবা সাদা পলিথিন
৩. বাঁশের ফালি এবং ছোট সাইজের রশি।

তৈরি করার প্রক্রিয়া :
প্রথমত, কাঁচা বা পরিপক্ব বাঁশ থেকে একধরনের ‘বেত’ তৈরি করে নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ‘বেত’গুলোকে রম্বস আকৃতি করে ৪ ফুটের একটি ‘জালি’ তৈরি করতে হবে। এভাবে দুইটি ‘জালি’ তৈরি করা লাগবে।
তৃতীয়ত, এবার দুই ‘জালির’ মাঝখানে শুকনো তালপাতা কিংবা সাদা হালকা পলিথিন দিয়ে ভালোমতো চারদিকে বাঁশের ফালি দিয়ে বাধতে হবে।
এভাবে তৈরি হয়ে যাবে, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ছাতা “জুইর”।
যেহেতু এটি প্রাকৃতিক উপকরণে তৈরি, তাই এটি পরিবেশবান্ধব এবং সহজলভ্য, যার কারণে যুগ যুগ ধরে এর ব্যবহার টিকে আছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিক ছাতার বিপরীতে এটি বিলুপ্ত প্রায়।
Comments (1)
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বেলা বিস্কুট এবং গণি বেকারির সাফল্যsays:
November 7, 2024 at 9:37 pm[…] চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘জুইর’ […]